
মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে, কেউ হেডফোনে গান শুনতে শুনতে, কেউ আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অরক্ষিত রেল ক্রসিং পারাপার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা মৃত্যুর দৃশ্য হরহামেশাই চোখে পড়ে নগরবাসীর। তারপরও যেন কিছুতেই থামছে না ঝুঁকি নিয়ে পারাপারের দৃশ্য। নারায়ণগঞ্জের উকিলপাড়া সহ বেশ কয়েকটি লেভেল ক্রসিং দিয়ে এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, ছোট-বড় যানবাহন। ফলে সময় বাঁচানোর নামে জীবন বাজি রাখতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়ছেন অনেকে। এভাবে প্রায় প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটলেও সচেতন হয়নি মানুষ।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে নগরীর উকিলপাড়া রেল ক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রেললাইনের দুই পাশে অবৈধভাবে লোহার অবকাঠামো দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু দোকান-পাট। গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এ রেল ক্রসিং দিয়ে রিক্সায় করে, অনেকে আবার পায়ে হেটে পার হচ্ছেন। ট্রেন আসছে দেখেও অবলীলায় উকিলপাড়া রেলক্রসিং পার হচ্ছেন তারা। মাত্র কয়েক হাত দূরে ট্রেন দেখেও যাত্রী নিয়ে পার হচ্ছে একটি ব্যাটারী চালিত রিক্সা। এভাবেই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছেন মানুষ। জেনে বুঝেই দুই মিনিট সময় বাঁচানোর নামে জীবন বাজি রাখছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদ মিয়া বলেন, এ লেভেল ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বার ও গেটম্যান নেই। বেশ কয়েকবার মানুষ ও যানবাহন পারাপার হতে গিয়ে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবসময় আতঙ্কের মধ্যে লেভেল ক্রসিং পার হতে হয়।
উকিলপাড়া রেললাইন সংলগ্ন একটি মার্কেটের এক দোকানদার বলেন, এখানে লেভেল ক্রসিংয়ে একটা গেটম্যান ও সিগন্যাল বারের প্রয়োজনীয়তা আমাদের ছাড়া কেউ উপলব্ধি করে না। ঝুঁকি নিয়ে আমাদেরকে লেভেল ক্রসিং দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ এলাকার ব্যবসায়ী হিসেবে আমরা নিরুপায়।
পথচারী রিপন আহমেদ বলেন, এখান দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই এ ধরনের চিত্র আমাদের চোখে পড়ে। মানুষ দ্রুত পার হওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে পার হতে চায়। আর এ তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটে নানা ধরনের দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা আরো জানান, এটি শহরের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও রেল ক্রসিং। এখান দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নগরীর প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া ও অন্যান্য এলাকায় যাতায়াত করে। পাশাপাশি এসব এলাকা থেকে কাজ শেষে প্রতিদিন তারা আবার নিজ বাড়িতে ফিরেন এ রেল ক্রসিং পার হয়ে। কিন্তু এ রেল ক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটম্যান বা সিগন্যাল বার। একসময় বাশ দিয়ে দুই পাশ আটকে দিতাম আমরা। কিন্তু এখন সেই বাশ ভেঙ্গে যাওয়ায় ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ এ ক্রসিং পার হতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয় আমাদের।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর রেল দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ মানুষ মারা যায়। হতাহতের সংখ্যা প্রায় ২৫০ জনের মতো। কিন্তু চোখের সামনে এমন দুর্ঘটনা ঘটলেও সচেতনতা তৈরি হয়নি মানুষের মাঝে। রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেলপথের দুই পাশে ১০ ফুট এলাকায় চলাচল আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ওই সীমানার ভেতর কেউ প্রবেশ করলে তাকে গ্রেফতারের বিধান রয়েছে। এমনকি ওই সীমানায় গবাদিপশু প্রবেশ করলে তা বিক্রি করে এর অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিনা পরোয়ানায় দায়ী ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা রাখে।
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার গোলাম মোস্তফা বলেন, উকিলপাড়া রেল ক্রসিংটি আমাদের তথা রেলওয়ের অনুমোদিত না। তবে চলমান ডাবল রেল লাইন প্রকল্পের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সবগুলো রেল ক্রসিংয়ের জন্য সিগন্যাল বার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।