
উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ও নান্দনিকতার মিশেলে দেশের অন্য যে কোনো জেলার কাছে নারায়ণগঞ্জকে রোল মডেল হিসাবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী এমনটাই বলছেন নগরবাসী তথা নারায়ণগঞ্জবাসী।
আইভীর নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ আজ উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে। আর তাই উন্নয়নের রূপকার, উন্নয়ন মানেই আইভী-আইভী মানেই উন্নয়ন সহ বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করা হচ্ছে চুনকা কণ্যাকে। অপরদিকে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রুখে দেওয়ার জন্য সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে যত বাধাই আসুক আইভীর হাত ধরেই নারায়ণগঞ্জ একদিন উন্নত নগর হিসেবে আসন করে নিবে দেশের মানুষের কাছে। পাশাপাশি উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে মানুষের মুখে মুখে নারায়ণগঞ্জের নামই থাকবে এমনটাই বলছে নগরবাসী। নারায়ণগঞ্জ এখন ধীরে ধীরে মাথা উচু করে দাড়াচ্ছে আর উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে সরকারের সকল সেক্টর থেকে মেয়র আইভীকে সহযোগীতা করতে হবে বলেও মনে করেন তারা।
সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ নগরী ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র হিসেবে সিটি করপোরেশন এলাকা দৃশ্যত বদলে দিয়েছেন আইভী। শুধু তাই নয়, একটি মহলের পক্ষ থেকে বার বার অভিযোগের তোলার পরেও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি। তিনি আওয়ামী লীগের নেত্রী, জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদে আছেন তারপরও নারায়ণগঞ্জের বিরোধীদলীয় রাজনীতিকরাও আইভীর বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ তোলেননি কখনো। এ জন্যই দল-মত-নির্বিশেষে সবার কাছে তিনি প্রিয় ‘আইভী আপা’। সাধারণ মানুষ তাঁকে চেনে কাজ পাগল হিসেবে, উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে। নাসিকের মেয়র হিসেবে টানা দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হওয়ায় সেলিনা হায়াত আইভীর কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও বেড়েছিলো বহুগুন।
তিনিও প্রতিশ্রæতিবদ্ধ নগরবাসীর উন্নয়নের প্রত্যাশা পুরণে। জানা যায়, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তা ঘাট সহ নারায়ণগঞ্জ নগরবাসীর বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য দিন রাত নিরালস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী। শুধু কাজই নয়, চলমান করোনাকালীণ পরিস্থিতিতেও আইভীর নেতৃত্বাধীণ সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রতিনিধিরা নগরীর মানুষের মাঝে সরকারী ত্রান সহায়তা পৌছে দিয়ে নগরবাসী, জেলাবাসী এমনকি দেশবাসীর পক্ষ থেকেও প্রশংসা কুড়িয়েছে।
আর এই প্রত্যাশা পুরনের অংশ হিসাবে নগরবাসী তথা নারায়নগঞ্জবাসীকে দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক উন্নয়নের ছোয়া ও নগরবাসীর কাঙ্খিত সুখী, সমৃদ্ধ ও সন্ত্রাসমুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ, একটি নগর। সবশেষে নগরীর ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডের গঞ্জে আলী খালকে দখলমুক্ত করে জিমখানা লেকের ন্যায় দৃষ্টিনন্দন আরো একটি লেক করার ঘোষণা দেন তিনি। নগরীর ২নং রেল গেইট এলাকায় করেছেন একটি মিনিপার্ক যা বর্তমানে শহরবাসীদের কাছে বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। এর পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে মন্ডলপাড়া পুল পর্যন্ত লেক নির্মাণ, প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যায়ে নগরীর বোটখাল খনন কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর মধ্যকার সংযোগ হিসেবে বাবুরাইল সংযোগ খালটির পুনরুদ্ধার করে ২৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন। জিমখানার বাবুরাইল খালটির সংস্কারকাজ শেষ হলে শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর মধ্যকার সংযোগ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। খালটির ওয়াকওয়ে, দুই পাড়ে বাঁধাই, ড্রেজিং এবং সৌন্দর্যবর্ধন ও পাতালপথ নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন মেয়র আইভী। সেই লক্ষ্যে স্ক্যাচ বা ডিজাইনও তৈরি করা হয়েছে। যে ডিজাইনটি ইতিমধ্যেই ইউএনহ্যাবিটেট কর্তৃক চীনে এশিয়ান টাউনস্কেপ এ্যাওয়ার্ড ২০১৬ অনুষ্ঠানে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাস্তবায়ানধীন বাবুরাইল খাল উন্নয়ণ প্রকল্পটি জুরি পুরস্কার অর্জন করে। এটি একটি মেগা প্রজেক্ট। অন্ধকারাছন্ন নারায়ণগঞ্জকে আলোকিত করে তোলার লক্ষ্যে মেয়র আইভীর প্রচেষ্টায় ও সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে চলছে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম।
তারই ধারাবাহিকতায় আধুনিক নারায়নগঞ্জ গড়তে ২০১৮ সালের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে ভাঙ্গারী পুল পর্যন্ত লেকের বিউটিফিকেশনের জন্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়ে কাজ করছেন মেয়র আইভী। আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগীতায় এই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। এই প্রজেক্টে লেকের দুই পাড়ে গাছ লাগানো, মানুষের বিশ্রাম নেয়া ও বসার ব্যবস্থা করা, লাইটিং করার পাশাপাশি হাটা-চলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এর পূর্বে গত মেয়াদে মেয়র থাকা অবস্থায় ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে জিমখানাতে শুরু করা জিমখানা লেকের নির্মাণ কাজও এখন প্রায় শেষের পথে এসে পড়েছে যা পুরোপুরী নির্মাণের পর পাল্টে যাবে নারায়ণগঞ্জের চেহারা। হাতিরঝিলের মতো একটি লেক যেমন পাল্টে দিয়েছে ঢাকাবাসীর জীবনযাত্রান মান, এনে দিয়েছে তাদের জীবনে স্বস্তির নিশ্বাস। ঠিক তেমনি হাতিরঝিলের আদলে নির্মিত এই জিমখানা লেক উন্মুক্ত করার পর পাল্টে যাবে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জীবনযাত্রার মান, নারায়ণগঞ্জের মানুষ পাবে এর একটি বিশাল সুফল।
ঠিক একইভাবে গত মেয়াদে ২০১১ সালের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি প্রধান প্রধান সড়কসহ প্রতিটি অলিগলিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতার সমস্যাও সমাধান করেছেন। পাশাপাশি নাসিকের তিনটি থানার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত বন্দর তথা বন্দরবাসীর চেহারাও পাল্টে দিয়েছেন স্মরণকালের সেরা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে। যারা বিগত কয়েক বছর দেশের বাইরে ছিলেন বা কোন কারণে গত পাঁচ বছরে বন্দর থানাধীণ এলাকাগুলোতে যেতে পারেননি তারা বন্দর গিয়ে চিনতেই পারছেনা তাদের চিরচেনা বন্দরকে। মেয়র আইভী এতই সৌন্দর্য্যবর্ধন করেছেন বন্দরের প্রায় সবগুলো এলাকার। তারা বলছেন বন্দরের পথগুলো এতটাই প্রশস্ত, চওড়া ও মনোমুগ্ধকর করে সাজিয়েছেন মেয়র আইভী যেন দেশের বর্তমান রাজধানী ঢাকার এলিট শ্রেনীর জন্য আবাসিক এলাকা হিসাবে পরিচিত গুলশান, ধানমন্ডি এলাকার রাস্তা-ঘাটগুলোকেও হার মানায়। শুধু বন্দরই নয় সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জেও বর্তমান সময়ের যে চিত্র দেখা যায় তা অতীতের যে কোন সময়ের উন্নয়নের তুলনায় এক অনন্য কৃর্তি বলে উল্লেখ করলেও ভুল বলা হবে না বলে মনে করেন নগরবাসী।
১৯৬৬ সালের ৬ জুন নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে একটি রাজনৈতিক পরিবারে তার জন্ম, তার বাবা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকা এবং মা মমতাজ বেগম। চুনকা পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে আইভী প্রথম সন্তান। তিনি দেওভোগ আখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলে ভর্তি হন এবং ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। অতঃপর তিনি মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ পান এবং ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় স্টারমার্কসহ উত্তীর্ণ হন।
এরপর তিনি ১৯৮৫ সালে রাশিয়ান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ওডেসা পিরাগোব মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৯২ সালে কৃতিত্বের সাথে চিকিৎসা ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে ইন্টার্নি সম্পন্ন করেন। ডা. আইভী তাঁর সুদীর্ঘ শিক্ষা জীবনের পর ১৯৯৩-৯৪ সালে মিডফোর্ট হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে তৎকালীণ নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।
পরবর্তীতে ডা. আইভী ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর রাজবাড়ী নিবাসী কাজী আহসান হায়াৎ-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী কাজী আহসান হায়াৎ বর্তমানে কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে নিউজিল্যান্ডে কর্মরত আছেন। পারিবারিক জীবনে তিনি দুই পুত্র সন্তানের জননী। দুই সন্তান হলো কাজী সাদমান হায়াত সীমান্ত ও কাজী সারদিল হায়াত অনন্ত। ১৯৯৫ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি সায়েন্সে অধ্যয়ন শুরু করেন। অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
সেলিনা হায়াৎ আইভী স্কুল ও কলেজ জীবন হতে বাবার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৯৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনে জয়লাভ করে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একই সাথে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত ও প্রভাবশালী প্রার্থী একেএম শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়ার মাধ্যমে।
২০১৬ সালের শুরুর দিকে সরকারের পক্ষ থেকে নাসিক মেয়র হিসাবে উপ-মন্ত্রীর পদ মর্যাদা দেয়া হয় আইভীকে। এরপরই আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি প্রেরিত এক বার্তায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আসীন করা হয় তাকে। পরবর্তীতে অনেক চড়াই-উৎরাই ও সরকার দলীয় এক সাংসদের সাজানো বিভিন্ন নাটকীয়তার পর অবশেষে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় গত নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনীত করা হয়। আর এর প্রতিদানস্বরূপ ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় মেয়াদের অনুষ্ঠিত হওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এডঃ সাখাওয়াত হোসেন খানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজীত করে দ্বিতীয় বারের মতো নারায়ণগঞ্জের নগরমাতা হিসাবে জয়লাভ করেন। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ১৭ বছর ধরে মেয়রের ক্ষমতায় রয়েছেন আইভী, তবে সহ্য করেছেন নানা প্রতিকূলতা।
No posts found.