
প্রাইম নারায়ণগঞ্জ:
মহামারী করোনার কারণে দীর্ঘ ৬ মাস অনলাইনে আদালতের কার্যক্রম চলার পর স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে পুনরায় আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে আবারও আদালতের বারান্দায় সময় কাটছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। রাজনৈতিক মামলায় আগাম জামিন আর জামিন পরবর্তী হাজিরার জন্য আদালত পাড়ায় ব্যস্ত বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে নতুন-পুরনো মামলায় হয়রান বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রতিনিয়ত তাদের দৌড়াতে হচ্ছে আদালতের বারান্দায়। আর তাই আবারও আদালতে হাজিরা দিয়েই দিন কাটছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের।
দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বর্তমানে রাজণৈতিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকায় এবং সরকারী দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে দিশেহারা হয়ে পড়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিএনপি। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত হয়ে বেশিরভাগ নেতাকর্মীরাই আবার আদালতে সময় পার করছেন। প্রায় প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়। কেউ উচ্চ আদালতে কেউবা আবার নিম্ন আদালতে হাজিরা দেন। প্রতিদিনই অনেক বিএনপি নেতাকর্মী বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিতে আদালত প্রাঁঙ্গণে ভীড় জমান।
করোনা পরিস্থিতির আগের মতো করোনা পরবর্তী সময়েও এখন বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা, কোর্ট, কারাগার নিয়েই মহাব্যস্ত। রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ছুঁটতে হচ্ছে আদালতের বারান্দায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে জামিন পাচ্ছেন অনেকে। অনেককেই আবার যেতে হচ্ছে কারাগারে। পুরনো মামলার চাপে এখন আদালত পাড়া ও কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে।
সদ্য বিলুপ্ত হওয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে জানান, ‘ আমরা বিরুদ্ধে ৩০টিরও বেশী রাজণৈতিক মামলা দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই হাজিরা দিতে আদালতে যেতে হচ্ছে। এটা তো একটা স্বৈরশাসনের প্রতিফলন। একদলীয় শাসন ব্যবস্থার একটি প্রতিফলন, আমাদেরকে আদালতে ব্যস্ত রেখে তারা নির্বিঘ্নে তাদের মতো করে দেশ চালাচ্ছে। তারা ভুল করলেও ভুল যদি আমরা ধরিয়ে দেই, তা তাদের কাছে গ্রহনযোগ্য হয় না। যে কারণে আজকে তাদের দলে মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু। আজও দেখলাম পিরোজপুরের সাবেক এমপি আব্দুল আউয়াল ও তার স্ত্রীকে দুদকের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে জানান, আমার বিরুদ্ধে ২২ টি মামলা রয়েছে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অজস্র মামলা দিয়ে এ সরকার জর্জরিত করে রেখেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের এখন আদালতেই সময় কাটে। আমিসহ অনেক নেতাকর্মীর প্রায়দিনই হাজিরা থাকে। এতে স্বাভাবিক কাজ কর্ম ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির আন্দোলন দেখে সরকার আবারও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য হয়রানীর চেষ্টা করছে। আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, দেশে শীঘ্রই একটা সুসময় আসবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে, ভোটের অধিকার ফিরে আসবে, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে এ আশাবাদ নিয়েই আমরা জনগনের পক্ষে কাজ করার চেষ্টা করছি।
জেলা যুবদলের সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ টির মতো মামলা ছিলো। এগুলোর বেশীর ভাগ নিষ্পত্তি হওয়ার পরও এখনো প্রায় ১২ টি মামলা চলমান আছে। আমাদের বিরুদ্ধে এসব মামলাগুলো ভিত্তিহীণ। আসলেই এ সকল মামলায় আমাদের কতো আর চাপায় রাখবো। দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। তারপরও মামলা হামলা উপেক্ষা করে দলীয় কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, সরকারের এসকল গায়েবী মামলার কারণে নির্যাতনের এবং নিপীড়নের কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে গেছি আমরা। এখন ফ্যামিলিতেও একটা বোঝা হয়ে গেছি।
জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে প্রায় ৩৫-৩৬টি মামলা রয়েছে। এই সরকার নিজেদের অপরাধ লুকানোর জন্য প্রতিনিয়তই মামলা করে যাচ্ছে। গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন আন্দোলন ও নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী শত শত মামলায় নেতা কর্মীরা আজ ঘরবাড়ি ছাড়া। এই মামলাগুলোর জামিন নিতে সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন শতাধিক নেতা কর্মীরা কোর্টের বারান্দায় হাজির হয়। কেউ উচ্চ আদালতে যায় আবার কেউ নিম্ন আদালতে যায়। সরকারের এই হিংসাত্নক আচরণের শিকার হয়ে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। দেশে এখন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের কোনো নিরাপত্তা নেই।’
No posts found.