
কাজটা সম্পূর্ণ করার জন্য চেয়ারে বসা কর্তব্যরত লোকটি টাকা নিয়েছে। এরপর সীল-স্বাক্ষর শুরু হয়। তবে হঠাৎ কাজ বন্ধ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে যায় সে। সামনে বসা ভুক্তভোগী ভাবলো, বোধহয় কম দেয়া হয়েছে। তাই কাজ শেষ না করেই উঠে যাচ্ছে। সে প্রশ্ন করলো, ভাই কাজটা শেষ করে যান —— এ কথা বলতে না বলতেই প্রচন্ড রেগে গেলো একটু আগে ঘুষ নেয়া মানুষটি! ভুক্তভোগীকে উদ্দেশ্য করে বলে – ‘আপনি কি মুসলমান ? শুনেন না আযান দিছে। আগে নামাজ, পরে কাজ।’
ভুক্তভোগী একদম চুপ! মুখে কোন রা’ নেই। বেচারার মনে প্রশ্ন জাগে ‘ঘুষ যে নিলো’ ?
একদিন এক সভায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘ঘুষ নেয়া অন্যায়’। কিন্তু সভায় যারা এসেছিলেন তারা কি গান্ধীর এ বাণী ঠিকভাবে শুনেছেন ? অনেকেই কৌতুক করে বলেন, সেদিন সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাকি বাক্যটি শুনেছেন এভাবে- ঘুষ নেয়া ‘অন্য আয়’। আর সে কারণেই নাকি ঘুষের পরম্পরা থেকে গেছে! কারও কারও অভিযোগ থাকতে পারে কৌতুকে গান্ধীর ঘুষ বিষয়ক বাণী বিকৃত করা হয়েছে। তবে এ চিত্র যে সব সময়ের বাস্তবতা তা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন কি ?
সেদিন এক ব্যক্তি বললো, একটি ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তার জীবন শুরু হয়েছিলো ৪র্থ শ্রেনী দিয়ে। পরে অফিসার হয়ে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের আশপাশেই তার তিনটি বাড়ি রয়েছে। গাড়ি হাঁকিয়ে চলেন অনেক দিন ধরে। এক সন্তান পৃথিবীর উন্নত একটি রাষ্ট্রে বাস করে। এত কিছু হওয়ার পর ওই ব্যক্তি এবং আরও অনেকে ওই কর্মকর্তাকে বলেছিলো, ‘ ভাই আগে যা করেছেন এখন তা বাদ দেন। আপনার অনেক সম্পদ। এত টাকা কে খাবে ? এখন তওবা করে সুপথে ফিরুন’। তাদের কারও কথাই পাত্তা দেয়নি ওই কর্মকর্তা। তিনি তার মতো করেই চলতে থাকেন। তবে ওই কর্মকর্তাকে থামতে হয়েছিলো দুদকের অভিযানে। দুদক টিম হাতেনাতে ঘুষ সহ তাকে গ্রেপ্তার করে। কিছু দিন জেল খেটে এখন জামিনে আছেন।
কথায় কথায় একজন শত কোটিপতি একদিন আমাকে বলে, ‘ ভাইরে টাকায় সুখ নেই। যার টাকা কম সেই সুখী’। তিনি আরও বললেন, ‘ এক সময়ে এক বেলা খাবার জুটলে আরেক বেলার নিশ্চয়তা ছিলো না। এখন অনেক টাকার মালিক তবে শান্তি নেই’। ভেবেছিলাম লোকটা হয়তো ভালো হয়ে গেছে তাই অনুশোচনায় এসব কথা বলছে। পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম- মোটেই ভালো হয়নি। আগের মতোই যা খুশী তা করছে।
মানুষ মুখে বলে এক করে আরেক। বক্তৃতায় আর টক শো’তে অনেকেই সাধু কথা বলে হিরো সাজে। বাস্তবে কে কী, তা কিন্তু মানুষের জানা। যদিও মানুষের কথাও হরেক রকম হয়। যেমন এলাকায় কেউ একজন সন্ত্রাসী টাইপের। তাকে সবাই মন্দ লোক বলেই জানে। তবে কেউ কেউ আলাপচারিতায় ওই সন্ত্রাসীর নাম নিয়ে বলে, ‘ ও তেমন মন্দ লোক নয়। কর সাথে কী করছে জানি না তবে সে আমাদের সাথে কখনও খারাপ ব্যবহার করেনি।’
ইতিহাসের পাতায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভিলেন এডলফ হিটলার। সে তার বাহিনীকে বলতো ‘ সন্ত্রাস, নাশকতা, হত্যা এবং বিস্ময়ের মধ্য দিয়ে শত্রুর মনোবল ভেঙে দাও, এটাই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ’।
ভবিষ্যত সম্বন্ধে হিটলার কতটুকু ধারণা রাখতো তা তার করুণ সমাপ্তি জানলেই যে কেউ বুঝতে পারবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ থেকে ক্ষমতাবানরাও সন্ত্রাসের পক্ষে চলে যায়। ক্ষমতাবানরা তাদের স্বার্থে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে আর সাধারণ না বুঝে করে। চাঞ্চল্যকর ৭ খুন মামলার মাস্টার মাইন্ড নূর হোসেন আগে থেকেই নানা অপকর্ম করতো। এরপরও ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনতা তাকে ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করে। মানুষ কাকে কেন ভোট দেয়, এ প্রশ্ন খুব সহজ হলেও উত্তর বেশ কঠিন। যোগ্যতম ব্যক্তিকে এড়িয়ে অযোগ্যকে নির্বাচিত করার অনেক ঘটনা ঘটেছে। যোগ্য হওয়া আর ভোটারের দৃষ্টি কাড়া এক নয়।
নারায়ণগঞ্জ শহরে সড়ক পার হওয়া জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ বলে মনে হয়। বিশেষ করে চাষাঢ়া গোল চত্বরে রোডের এপার ওপার হতে গিয়ে বেশ চিন্তায় পরতে হয়। এদিক থেকে বাস আসছে তো ওদিক থেকে ট্রাক-কভার্ডভ্যান আবার আরেক দিক থেকে সিএনজি কিংবা নানা রকম রিকশা। এরমধ্যে হুট করে একাধিক মোটর সাইকেল না দেখতেই চলে আসে। অধিকাংশ মোটরসাইকেলে বসা আরোহী তরুণ বয়সী। যারা এমনি এমনিই শহরে ঘুরে ! সড়ক জ্যাম থাকলে ফুটপাতে উঠিয়ে দেয় ৩ চাকার বাহনটি।
এসবের মধ্যে দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হতে হয়। ট্রাফিক পুলিশ দিনভর চেষ্টা করে যানবাহনকে সঠিক পথে চালাতে। কমিউনিটি পুলিশ রিকশা, সিএনজি সামলাতে ব্যস্ত। — তবে মানুষ কীভাবে সড়ক পার হবে তা নিয়ে কারও ভাবনা নেই। এ চিন্তা শুধু পথিকের। অনেক্ষন দাঁড়িয়েও সড়ক পার হতে গিয়ে নানা ধকল সামলাতে হয়। সড়ক ফাঁকা দেখে কেউ যে -না পার হতে উদ্যোগ নিলেন এমনিই দেখা গেলো দূরের রিকশা চালক দাঁড়িয়ে জোরে প্যাডেল দেয়া শুরু করেছে। এতক্ষন বসে প্যাডেল দিলেও মানুষ পারাপার দেখে দাঁড়িয়ে জোরে রিকশা চালানো শুরু করে সে। তার মানে পথিক পারাপারে সে কোন প্রকার সহযোগীতা করবে না, থামবে না।
রিকশা চালকের মতো সমাজের এক শ্রেনীর লোভী মানুষও থামে না। রিকশা চালক না হয় তার কর্তব্য অনুধাবন করতে পারে না। অন্যরাতো লেখাপড়া শিখে চাকরী করছে। তারা কেন থামে না—– ? ? তারা কেন রিকশা চালকের মতোই প্যাডেল দিয়েই চলছে !
লেখকঃ আনোয়ার হাসান
বার্তা সম্পাদক, দৈনিক সংবাদচর্চা
ও নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা, আরটিভি।
No posts found.