
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ওসমানদের পেছনে হাটলেই কোটিপতি হওয়া যায় এমন অনেক উদাহরণই রয়েছে। ওসমানদের পেছনে পেছনে হেটে যারা আয়েশী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েছেন ভিপি বাদল খ্যাত আবু হাসনাত মোঃ শহীদ বাদল তাদের মধ্যে অন্যতম একজন বলে মনে করেন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ প্রায় সকল মহলের নেতৃবৃন্দরা। একই ধারণা পোষণ করে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ জনগনও।
আর তাই ভিপি বাদল ও ওসমান পরিবারের মেঝো সদস্য সেলিম ওসমান একে অপরের বিরোধিতা করে যা কিছু বলছে এর সবই নাটকের দৃশ্য বলেও অভিমত তাদের। তাদের মতে, ভিপি বাদল মুখে যাই বলুক না কেন কার্যত তিনি সেলিম ওসমানের ডাকের অপেক্ষায় রয়েছে।
২০১৪ ও ২০১৮ সালে। ২০১৪ সালে ভিপি বাদলকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেন সেলিম ওসমান।
শুধু সরিয়েই দেন নি তিনি নিজে বসেছিলেন সভাপতির পদে। নারায়ণগঞ্জ কলেজ থেকে সরিয়ে দিলেও সেলিম ওসমানের পিছু ছাড়েন নি বাদল, ছিলেন ওসমানদের সাথেই। একইভাবে ২০১৮ সালে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকা না লাঙ্গলের প্রার্থী এ নিয়ে কিছুটা পাল্টাপাল্টি ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনাও ঘটে উভয়ের মাঝে। তারপরও ঠিকই আবার ওসমানদের তথা সেলিম ওসমানের ডাকে ফিরে এসেছিলেন ভিপি বাদল। আর তাই এবারও সেরকম কিছু দেখার অপেক্ষায় নারায়ণগঞ্জবাসী।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, ভিপি বাদলের পক্ষ থেকে সেলিম ওসমানের বিরোধিতা এতো গেল মুদ্রার এপিঠ, মুদ্রার ওপিঠে কি থাকতে পারে তাও আছে সকলেরই জানা। বাদলকে নারায়ণগঞ্জবাসী যেভাবে চিনে, তা হলো শামীম ওসমানের বন্ধু হওয়ার পাশাপাশি ওসমানদের অন্যতম ঘনিষ্ঠজন হলেন ভিপি বাদল। শুধু ঘনিষ্ঠতা নয় আজ বাদলের যতো বিত্ত-বিভব, রাজনৈতিক-সামাজিক উত্থান সবই ওসমান পরিবারের বদৌলতে এমনটিই মনে করেন তারা। আর এক্ষেত্রে তাদের যুক্তিও আছে অনেক।
একটি যুক্তির দিক উল্লেখ করে বলা যায়, এ জেলার বাসিন্দা না হয়েও জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী হলেন ভিপি বাদল। এছাড়াও জেলা যুবলীগের সেক্রেটারীর পদ, স্থানীয় রাজনীতি কেন্দ্রীক নেতা হয়ে রাজধানীতে বসবাস, বতর্মানে বাদল সবার কাছে যে নামে পরিচিত সেই ভিপি বাদল নামটির প্রাপ্তিও ওসমান পরিবারেরই অবদান অভিমত তাদের। এতো প্রাপ্তির পরও কেন সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধাচারণ করছেন বাদল, এমন প্রশ্ন আসতে পারে জনমনে।
এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ এক নেতা বলেন, এর দুটি কারণ হতে পারে। একটি হলো ভিপি বাদল হয়তো মনে করছেন ওসমানরা এক সময় বাঘ হিসাবে আখ্যায়িত হলেও এখন তারা কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে। ওসমানদের রাজনৈতিক প্রভাব এখন আর নেই। সামনের দিনে আরো থাকবেনা সেই প্রভাব। অপর কারণটি হতে পারে নারায়ণগঞ্জ কলেজের সভাপতির পদ থেকে বের করে দেয়াসহ বেশ কিছু ইস্যুতে ওসমান পরিবারের পক্ষ থেকে বাদলকে আর আগের মতো গুরুত্ব না দেয়ায় এমনটিই মনে করেন জেলার এই সহ-সভাপতি।
নাসিম ওসমানের জীবদ্দশায় শিক্ষা খাত সহ বিভিন্ন খাতে ভিপি বাদল যে সুবিধা ভোগ করেছেন তার অনেকগুলো খাতই বন্ধ হয়ে যায় সেলিম ওসমান এমপি হওয়ার পর। আর তাই হয়তো আক্রোশের জেরে সবার সুরে সুর মিলিয়ে এসব বলছেন বাদল। তার মতে, বাদল হয়তো ভাবছেন আগামী দিনগুলো ওসমানদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই সব বিষয় মাথায় রেখেই বাদল নিজের আখের গুছানোর পরিকল্পনা থেকেই ওসমানদের বিরোধিতায় মত্ত হয়েছেন, ধীরে ধীরে সটকে পড়ছেন ওসমানীয় শাসন বা ওসমান বলয় থেকে।
তবে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল মনে করেন, বাদল মুখে যাই বলুক না কেন ওসমানদের বাইরে গিয়ে বা তাদের মতাদর্শের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো সাহস বা শক্তি কিছুই নেই বাদলের। বাদল যখন আচ করতে পারবেন আগামীতেও ওসমানদেরই রাজত্ব থাকবে এ নারায়ণগঞ্জে, ঠিক তখনই তাকে দেখা যাবে পুরোনো রূপে। তখন সুর পাল্টে শুধু উল্টো সুরে নয়, পথ পাল্টে পুনরায় ওসমানদের পিছনেই হাটবেন তিনি। কেননা অন্য জেলা থেকে এসে ওসমানদের পিছনে থেকে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন এমন নেতাদের মধ্যে সবার উপরের সারিতেই আছেন ভিপি বাদল খ্যাত আবু হাসনাত মোঃ শহীদ বাদল।
সবদিক বিবেচনায় তারা মনে করেন, সেলিম ওসমানের ডাকের অপেক্ষায় অপেক্ষারত ভিপি বাদল। অপরদিকে সেলিম ওসমানও যে ভিপি বাদলকে ডাকবেন তাও জানেন নারায়ণগঞ্জের সবাই। তাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলেন, বাদল আছে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায়, সেলিম ওসমান আছেন ডাক দেবার অপেক্ষায় আর নারায়ণগঞ্জবাসী রয়েছে এই নাটকের শেষ দৃশ্য দেখার অপেক্ষায়।
No posts found.