
পরিবহন সংকট ও করোনার ঝুঁকিতে বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না জেলাবাসীর বড় একটি অংশের। আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে কোরবানিও দিতে পারছেন না অনেকে। কিন্তু ঈদ বলে কথা। মাংস তো লাগবেই। তাই আগেই যোগাযোগ করছেন বাড়ির কাছের মাংস ব্যবসায়ীর সঙ্গে। অর্ডারও দিয়ে রাখছেন।
এ অবস্থায় মাংস ব্যবসায়ীদের অনেকে চক্র তৈরি করে দাম বাড়িয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রবল চেষ্টা করবেন বলে আশঙ্কা করছেন ভোক্তারা। তাঁরা বলছেন, অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, নগর সংস্থা মাংসের দাম বেঁধে দিলেও, এমনকি দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও কোনোভাবেই নৈরাজ্য থামানো যায়নি।
দেওভোগ এলাকার সিরাজুল ইসলাম বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘কোরবানিতে এবার নারায়ণগঞ্জেই থাকতে হচ্ছে। চাহিদামতো শরিকও পাচ্ছি না। তাই আমাকে মাংস কিনেই ঈদ করতে হবে। কিন্তু ঈদ এলেই যেভাবে মাংসের দাম বাড়ে তাতে বাজেট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাংস পাব কি না এই শঙ্কায় রয়েছি।’ একই ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাবুরাইলের বাসিন্দা সায়মনও।
প্রতিবছরই নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে বাড়ি যেতে পারে না কিছু মানুষ। গ্রামের বাড়ি কোরবানি দেওয়ায় এখানে আর কোরবানিও দেয় না। তারা ঈদের আগের দিন মাংস কিনে রাখে। গত বছর পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল খুবই কম। গত বছর ছোট দোকানগুলোতে পাঁচ থেকে দশ মণ গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ১০-১২টা পর্যন্ত গরু বিক্রি করেছেন। সেটাও আগাম অর্ডারের ভিত্তিতে নয়। কিন্তু এ বছর করোনায় চিত্র বদলে গেছে। কোরবানির এখনো বাকি ১০ দিন। এর মধ্যেই মাংসের অর্ডার আসতে শুরু করেছে। তার পরিমাণও অনেক বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বউবাজারের মাংস ব্যবসায়ী আসলাম মিয়ার দোকানে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত চারজন ১০-১৫ কেজি করে গরুর মাংসের অর্ডার দিয়েছেন ঈদের জন্য। গত বছর ঈদের আগের দিন মাংস বিক্রি করলেও আগে থেকে এভাবে কেউ অর্ডার দেয়নি বলে জানান ওই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এবার কোরবানি না দেওয়া লোকের সংখ্যা বাড়ছে। তাই ঈদে মাংসের চাহিদাও বাড়ছে।
মাংসের আগাম অর্ডারের কথা জানিয়েছেন দিগুবাবুর বাজারের ব্যবসায়ীরাও। তারা বলেন, ‘সাধারণত রোজার ঈদে এমনটা হয়। মাংসের অর্ডার আসে। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদের আগে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন অর্ডার দিয়েছেন।’
এ ছাড়া মাসদাইর বাজার, দেওভোগ মাদ্রাসা বাজার, ভোলাইল গেদুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁদের দোকানে মাংসের জন্য অর্ডার আসতে শুরু করেছে। ঈদের আগ পর্যন্ত অর্ডার আরো বাড়বে বলে তাঁরা মনে করছেন।
দাম বৃদ্ধির যে আশঙ্কা জনগনের তার সত্যতা পাওয়া গেলো বাজারগুলোতে ঘুরে। নানা অজুহাতে নিজেরাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এবার যারা আর্থিক সংকটে পড়ে কোরবানি দিতে পারবে না তারা মাংসের বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
মাংস ব্যবসায়ীরা বলছে, খরচ হিসাব করেই মাংসের দাম বাড়ানো হয়। হাসিল, পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়া, কম বিক্রি এসব কারণে মাংসের দাম বাড়ানোর বিষয়টিকে যৌক্তিক মনে করেন তিনি।
এবার বাজাগুলোতে মাংসের দাম নির্ধারন করা হবে কিনা জানতে যোগাযোগা করা হলে ফোন রিসিভ করেন নি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো: আবুল আমিন।
No posts found.