
তখন করোনার প্রাদুর্ভাব মাত্র শুরু হয়েছে। দিনদিন সংক্রমের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছিলো। যেহুতু আমি জেলার করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পার্সন ছিলাম, কাজের ব্যস্ততা ছিলো প্রচুর। গত ৪এপ্রিল বন্দর একটি এলাকা লকডাউনের পর ৫এপ্রিল থেকে আবারও কাজ শুরু করি। ৬এপ্রিল ফতুল্লার কাশিপুর এলাকা একজন ব্যাক্তি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে সেখানে একটি এলাকা লকডাউনের পর কিছু অসুস্থ বোধ করছিলাম। ঐদিনই আমার নমুনা সংগ্রহ করে এবং ৮এপ্রিল রিপোর্ট দেয়, আমার করোনা প্রজেটিভ আসে। মুঠোফোনে কথা গুলো বলছিলেন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পারসন ডা. জাহিদুল ইসলাম।
জানালেন ঐ সময়ের অভিজ্ঞতার কথা। জাহিদুল ইসলাম বলেন, রিপোর্ট পাওয়ার সাথে সাথেই আমি বাড়িতে আইসোলেশনে থাকি। প্রচন্ড জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট ছিলো। তারমধ্যেই বাড়িতে বসে ফোনে অফিসের কাজগুলা করেছি। হঠাৎ করেই আমার ১৫ বছরের মেয়ে এবং আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়। তাদেরও করোনা প্রজেটিভ আসে। বাসায় বসেই চিকিৎসা নেওয়া শুরু করলাম। জ্বর বেশি থাকলে জ্বর কমানোর মেডিসিন, কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে সেগুলার মেডিসিন নিতাম। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার।
পরিবার থেকে কতটুকু সাপোর্ট পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার বাবা উপরের তালায় থাকেন আমি নিচ তলায়। বাবা প্রচুর কান্না করতো। আমার করোনা প্রজেটিভ আসার পর তিনি ভাবতে শুরু করলে আমি হয়তো আর বাচবো না। কিন্তু এ ধারনাটা ভুল, করোনা আক্রান্ত হয়ে সচেতন হলে সুস্থ জীবনে ফিরা সম্ভব। বাড়িতে বসেই অফিসের কাজ করতাম, ফোন ব্যস্ত দেখলেই বাবা কান্না করা শুরু করতো। দিনে ৫থেকে ৭বার ভিডিও কলে কথা বলেছে।
জানালেন শেষ ৪মাস যাবৎ বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না। বলেন, আমি সুস্থ হবার পর আবারও বাহিরে গিয়ে কাজ করি। বাবার সঙ্গে দেখা করতে গেলে নিরাপদ দুরুত্ব মেনে দেখা করি। কারন বাবার এ্যাজমার সমস্যা।
আশপাশের লোকজন কি আড়চোখে দেখতো এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আমার আশেপাশের মানুষ আমাকে সহযোগীতা করেছে নানাভাবে। তবে ১শতে দু/একজন লোক একটু আড়চোখে দেখবে এটাই স্বাভাবিক।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে দুই আড়াইশ ফোন কল আসতো। সেগুলা রিসিভ করতাম তাদের মনবল শক্ত রাখার কথা বলতাম। ক্রিটিক্যাল রোগী হলে এম্ব্যুালেন্সে করে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়ে দিতে হতো। তবে অনেকে ইউটিউব বা ফেসবুকে দেখে যে গরম পানির ভাব নিতে হবে। আমি এটা করতে নিষেদ করি। এমনও শুনেছি ভাপ নিতে গিয়ে নাক পুড়িয়ে ফেলেছে। ভাব নেওয়া যাবে না। গরম পানি পান ও গরগর করতে হবে।
No posts found.