৯ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, রাত ১:০১

রাত ৯ টায়ও নগরীতে তীব্র যানজট ॥ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ

প্রাইমনারায়ণগঞ্জ.কম

দীর্ঘ ৬ মাস মহামারী করোনার কারণে নগরজুড়ে স্থবিরতা নেমে আসলেও লকডাউন তুলে দেয়ার পর প্রথম দিকে মানুষ সন্ধ্যার পর ঘর থেকে খুব একটা বের হতো না। কিন্তু ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন দিনে তো বটেই রাতেও নগরীতে যানজট লেগে থাকে। বেশ কয়েকদিন যাবৎ সন্ধ্যা থেকেই নগরীতে যানজট দেখা গেছে। বিশেষ করে নগরীতে প্রবেশ করতে এবং নগরী থেকে বের হতে গিয়ে চাষাড়া গোল চত্বর এলাকায় অনেকে দীর্ঘসময় যানজটে আটকা পড়েন। এতে বেশ ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী ও জনসাধারণ।

নগরবাসীর মতে, পুরো নগরী জুড়ে সবসময়ই অসহনীয় যানজট লেগে থাকে যা দিনে দিনে ঐতিহ্যে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। যুগের পর যুগ নগরবাসী যানজটের দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। দিনের পাশাপাশি রাতেও নগরীর চাষাড়া মোড়, কালিরবাজার, ২নং রেল গেট, ১নং রেল গেট ও না:গঞ্জ ক্লাবের সামনে যানজট লেগেই থাকে।

সূত্র মতে, নগরীর এসব এলাকায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগেই থাকে। যানজটের দুর্ভোগের ভয়ে অনেকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র চাষাড়ায় আসতে চান না। এ জন্য যত্রতত্র রিকশা, ব্যাটারিচালিত ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ডকে দায়ী করা হচ্ছে। চাষাড়ার প্রধান কয়েকটি মার্কেটসহ নগরীর অধিকাংশ বহুতল ভবন মার্কেটের বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিং না থাকায় এবং যে কয়েকটি ভবনে আছে সেখানে গাড়ি পার্কিং না করে মার্কেটের সামনে গাড়ি রাখায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ছাড়া রাইফেল ক্লাবের সামনের অবৈধ সিএনজি, লেগুনার স্ট্যান্ড, খাজা মার্কেটের সামনের অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ড, উত্তর চাষাড়ার মোড়ের অবৈধ ফুটপাত দখলকারীদের এবং বাগে জান্নাত মসজিদের সামনের অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড ও দূরন্ত বাসের কাউন্টারসহ নগরী জুড়ে ফুটপাতে হকার ও ভ্রাম্যমাণ ভ্যান রিকশার হকারের কারণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক স্থানে শুধু ফুটপাথ নয় সড়কও দখল করে ব্যবসা করা হচ্ছে। এই দৃশ্য বেশি চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধু সড়কের সমবায় মার্কেট, পানোরামা প্লাজা, লুৎফা টাওয়ারসহ আশেপাশের মার্কেটের সামনে।

চাষাড়া শহীদ মিনারের সামনে যানজেট আটকে থাকা বাসযাত্রী বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা মো: আলমগীর কবির জানান, লকডাউন তুলে দেয়ার পর প্রথমদিকে রাস্তায় যানবাহন কম চলাচল করতো। কিছুদিন ধরে সেই চিত্র পাল্টে গেছে। এখন প্রতিদিন এমনকি প্রতি রাতেও যানজট লেগেই থাকে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন অফিস শেষে চাষাড়া দিয়েই ঢাকায় আমার বাড়িতে যেতে হয়। প্রতি রাতেই সন্ধ্যা থেকে রাস্তায় প্রচুর গাড়ির চাপ থাকে। শুধু চাষাড়াতেই প্রায় ৩০/৪০ মিনিট বাসে বসে থাকতে হয়। আজও প্রায় ৪০ মিনিট যাবৎ জ্যামে আটকা পড়ে আছি। বুঝতে পারছি না কখন এই তীব্র যানজট থেকে মুক্তি পাব?

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, নগরীর যানজট নিরসনে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। অনেক স্থানে রাস্তার ওপরে দোকান গড়ে ওঠায় রাস্তা সরু হয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিরসনে ফুটপাতের হকার উচ্ছেদ এবং কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।

এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, যানজট নগরীর জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজটের কারণে বাইরের লোকজন নগরীতে আসতে চায় না। পুলিশ প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ের মাধ্যমে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, নগরীজুড়ে সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। যার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে এগুলোকে নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে নেওয়া উচিত।

নগরীর ট্রাফিক পরিদর্শক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, এতোদিন করোনার জন্য গাড়ির চাপ কম ছিলো তবে এখন গাড়ির প্রচুর চাপ বেড়েছে। তাছাড়া চাষাড়া মোড়ে সুগন্ধার সামনে বিশালাকার গত, রেল লাইনের নীচে গর্তসহ বিভিন্ন স্থানে গর্ত থাকায় এবং ট্রেনের গতি কম থাকায় যানজটের মাত্রা বেড়েছে। দিনে কমপক্ষে ১৬ বার ট্রেন যাতায়াত করে কিন্তু ট্রেনের গতি খুব কম থাকায় ট্রেন চলাচলের সময়গুলোতে বেশী সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের।

তিনি আরো বলেন, এএসপি সালেহ উদ্দিন স্যার নিজে রাস্তায় থেকে যানজট নিরসন করছে এবং আমরা ৩ জন টি আই, ৩ জন এ টি আই সহ ৩/৪ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য কাজ করছি। আমরা নিজেরা চাষাড়ার মোড়ে ইট বিছিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছি। ইনশাআল্লাহ আগামী ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।

প্রাইম/এস আই এস

বাছাইকৃত সংবাদ

No posts found.