
প্রাইম নারায়ণগঞ্জ:
নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন আবারো বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যেই। এসব পলিথিন নগরীর বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে চলা বিভিন্ন কারখানা থেকে কৌশলে দিগু বাবুর বাজার, ২নং রেল গেট এলাকাসহ বিভিন্ন বাজার হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে খুচরা দোকানে। প্যাকেজিং শিল্পের জন্য পলিথিনের উৎপাদন বৈধ থাকায় এর আড়ালে কারখানা গুলোতে বে-আইনীভাবে উৎপাদন হচ্ছে হ্যান্ডলিং (হাতে ধরার) পলিথিন। শুধু দিুগবাবুর বাজার ও ২নং রেল গেট এলাকাই নয় বিভিন্ন মার্কেটেই অবৈধ এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন অসাধু পাইকারি বিক্রেতারা। কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে অথবা বস্তাবন্দি করে পাইকারি দোকানে ঢুকছে এবং বিক্রি হচ্ছে পলিথিন। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পলিথিন নিষিদ্ধের যে আইন রয়েছে তাতে অনেক কিছুই অস্পষ্ট।
জানা যায়, নগর ও শহরতলীল বিভিন্ন এলাকার পলিথিন কারখানাগুলোতে দিন-রাত চলে পলিথিন তৈরির কাজ। পলিথিন তৈরির সরঞ্জাম বিক্রির জন্যও রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারার্স ওনার্স অ্যান্ড ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের জেলা শাখার নেতৃবৃন্দরা বলেন, ‘যারা প্যাকেজিংয়ের দোকানে শপিং ব্যাগ বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে সমিতি ব্যবস্থা নিচ্ছে। জরিমানা করা, নির্দিষ্ট কয়েক দিন দোকান বন্ধ করে দেওয়াসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কারখানাগুলোও নজরে রয়েছে। এর ফাঁকেও বিক্রি করে। আসলে এটা নিয়ে সরকার অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আইনের ব্যাখ্যা ঠিক না হবে, ততক্ষণ সমস্যার সমাধান হবে না।’
তারা বলেন, ‘আসলে পলিথিন ব্যাগ আর পলিথিন প্যাকেজিং দুটি আলাদা জিনিস। আইনটি দুটিতে গুলিয়ে গেছে। সরকার পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু প্যাকেজিং আলাদা। বিদেশ থেকে যে পণ্যগুলো আসছে সেগুলোর র্যাপিং হচ্ছে প্যাকেজিং দিয়ে। পাশাপাশি এটার সঙ্গে এক্সট্রাও দেওয়া হচ্ছে। এটা যখন আসছে তখন বৈধ, আবার লোকাল বাজারে যখন প্যাকিং করা হচ্ছে এটা অবৈধ।’
গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগুবাবুর বাজার ও ২নং রেল গেট এলাকায় পলিথিনের দোকানগুলো প্রকাশ্যে পলিথিন বেচাকেনা হচ্ছে। দুপুর আড়াইটার দিকে ২নং রেল গেটস্থ পলিথিনের মার্কেটে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকান মালিক বলেন, মার্কেটে এটা নতুন নয়! মাঝে মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান হলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবার সব ঠিক হয়ে যায়। মার্কেটে সবাই ব্যবসা করছে, কোনো অপরাধ তো করছে না।
জানা যায়, প্যাকেজিং পলি বলা হলেও বাস্তবে এগুলো হাতে বহন করার মতো করেই তৈরি করা হয়। পিপি, এইচডিপি, এলডিপি প্যাকেজিং পলিথিন পাইকারি বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন আকারের এই পলি পাউন্ডের ওজনে বিক্রি হয়। বাজারে চার রকমের হ্যান্ডলিং (তোড়াসহ) পলিথিন রয়েছে, যার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দাম। এসব পলিথিনের রঙেও রয়েছে ভিন্নতা কালো, নীল, সাদাসহ কয়েক রঙের।
আরও জানা যায়, বেশির ভাগ পাইকারি দোকানির রয়েছে কারখানা অথবা কোনো না কোনো কারখানার মালিকের সঙ্গে রয়েছে চুক্তি। ওই মালিকদের প্যাকেজিং ব্যবসার নামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পলিথিন বিক্রি করাই মূল ব্যবসা।
সচেতন মহলের মতে, জেলা প্রশাসন যখন সজাগ হয় শুধুমাত্র তখনই বন্ধ থাকে এসব নিষিদ্ধ ঘোষিত হ্যান্ডলিং পলিথিন। আবার তারা যখন অন্য কোনো দিকে ব্যস্ত হয়ে এ সেক্টরে সময় দিতে পারে না তখনই দেদারছে বেচা-বিক্রি শুরু হয় পলিথিনের। মোট কথা প্রশাসনের কড়া নজরদারীর অভাবেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এসব পলিথিন প্রকাশ্যে কেনাবেচা ও এর ব্যবহার আগের তুলনায় বেড়েছে বহুগুন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সকল পলিথিনের পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চেয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামীম বেপারী বলেন, এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনিই ভালো বলতে পারবেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।
No posts found.