
ঝিমিয়ে পড়েছে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের রাজণৈতিক কর্মকান্ড, থমকে গেছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। কমিটি আছে, নেই কোন কার্যক্রম, কোন গতিশীলতা। স্বেচ্ছাসেবকলীগ নারায়ণগঞ্জে কাগজে কলমের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। মাত্র কয়েকজন নেতাকে মূল দলের নেতাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়। এরা ২-৩ জনের মধ্যে পুরো জেলা সীমাবদ্ধ।
আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংগঠন। সারা দেশে স্বেচ্ছাসেবকলীগ সুসংঘটিত। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও যেকোন রাজনৈতিক কর্মসূচীর মধ্যে অতীতের সব ইতিহাসে স্বেচ্ছাসেবকলীগের অবদান অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের জন্য মুজিবাদর্শের লড়াকু সৈনিকরা স্বেচ্ছাসেবকলীগের মাধ্যমে রাজপথ সরব রাখতো কখনো পিছপা হননি। অথচ এ সংগঠনটি নারায়ণগঞ্জে নিষ্প্রভ। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নারায়ণগঞ্জে অস্তিত্বহীন রয়েছে।
এদিকে ২০১৭ সালের ২০ জুলাই কেন্দ্র থেকে মহানগর কমিটির সভাপতি হিসাবে মোঃ জুয়েল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুলাল প্রধানসহ ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তারপর কিছুদিন চাঙ্গা থাকলেও বেশ কিছুদিন যাবৎ পুরোনো চেহারায় রূপ নিয়েছে মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ। নেতাকর্মীদের মতে, নতুন কমিটি হওয়ায় আমাদের মাঝে যে উচ্ছাস ছিল তা আজ ফিকে হয়ে আসছে। এর কারণ হিসাবে তারা বলেন, নতুন কমিটি অনুমোদন হওয়ার পর আমরা বেশ কিছুদিন রাজপথে থেকে দলীয় সকল কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছি। কিন্তু বর্তমানে কোন এক অদৃশ্য কারণে দলীয় কার্যক্রমে মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ এখন আর আগের মতো অংশ গ্রহন করে না। এক কথায়, তৃণমুল নেতাকর্মীদের মতে মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের কার্যক্রমে কিছুটা ধীর গতি এসে পড়েছে, যার ফলে মহানগর কার্যক্রম অনেকটা মন্থর বলে মনে করেন তারা।
অপরদিকে জেলা কমিটির আহবায়কসহ প্রায় সবাই নিস্ক্রীয়। তবে দলীয় দু/একটি কর্মসূচীতে একা আসতে দেখা যায় জেলার আহবায়ক নিজামউদ্দিনকে। স্বেচ্ছাসেবকলীগ নারায়নগঞ্জ জেলা দূর্বল ও নিস্ক্রীয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে বলে জানা যায়। নিজস্ব স্বকিয়তায় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের এ সহযোগী সংগঠনটির জেলা শাখার কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার মত শক্তি সামর্থ্য নেই বলে দাবি করে খোদ স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মীরা। তবে মূলদল ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোর সাথে মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও জেলা কমিটি এক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ইউনিয়ন কমিটি ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোও নেই বললেই চলে। এখানে মাসিক কিংবা বছরেও কোন ইউনিয়ন কমিটি এ যাবৎ স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে এমন কোন নজির নেই। ওয়ার্ড কমিটিরও একই অবস্থা।
জানা গেছে, ওয়ান ইলেভেনের সময় নাসিক মেয়র আইভীর খালু নিজামউদ্দিনকে আহবায়ক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের ১০১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়। এছাড়া যুগ্ম আহবায়ক করা হয় ফিরোজ হোসেন, আব্দুল মতিন মন্টু, গোলাম কিবরিয়া খোকন ও শাহাজাদা প্রধান বাবুলকে। আহবায়ক কমিটি দিয়ে এক যুগ ধরে নামে চলছে নারায়নগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ। নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। নেই কোন সাংগঠনিক শক্তি ও কার্যক্রম, এর নাম নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ।
নিজস্ব স্বকিয়তা ও রাজনৈতিক পরিধি হারিয়েছে স্বেচ্ছাসেবকলীগ। সংগঠনটি শুধু নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার পাশাপাশি আলাদা কোন কর্মসূচী পালনের সক্ষমতা অনেক আগেই হারিয়েছে বলে মনে করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। আর নেতাদের অস্তিত্বহীনতার জন্য এর দূর্বল ধারাও প্রকাশ পাচ্ছে সর্বত্র। নারায়ণগঞ্জে মূলদল আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দরা স্বেচ্ছাসেবকলীগের এ অচলাবস্থাকে নারায়ণগঞ্জের জন্য অশনি সংকেত মনে করছেন। তারা এর উত্তরণ ঘটিয়ে নব উদ্যোমে আওয়ামীলীগের অন্যতম প্রাণ শক্তি স্বেচ্ছাসেবকলীগকে উজ্জীবিত করা ও সাংগঠনিক ভীত সৃষ্টির জন্য মত দিয়েছেন।
এব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবকলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক নেতা বলেন, খুব শীঘ্রই নারায়নগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি করা হবে। আমরা ইতিমধ্যে এই কমিটি নিয়ে কাজ করছি। খুব শীঘ্রই নারায়নগঞ্জ জেলাা পূর্ণাঙ্গ ও শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে বলেও তিনি জানান। এতদিন কেন পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করেন নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বরাবরই কাজ করে আসছি। কমিটি গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে। তবে আমরা খুব শীঘ্রই কমিটি’টির অনুমোদন দিবো।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭২ সালে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নামে প্রতিষ্ঠিত ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগে রূপ নেওয়া বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের এই অঙ্গসংগঠনটি।
No posts found.