৮ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, দুপুর ১:১০

বিতর্কিতদের ঠাই হচ্ছে না যুবলীগে

প্রাইমনারায়ণগঞ্জ.কম

প্রাইম নারায়ণগঞ্জ:

শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হতে পারে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলন এমনটাই দাবী যুবলীগের নেতাকর্মীদের। আর তাই এ সম্মেলনকে সামনে রেখে ত্যাগী ও পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বের লড়াই চলছে। দুই কমিটির হাল ধরতে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। তবে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারীদের শেল্টারদাতাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নেতাদের কমিটিতে ঠাঁই হচ্ছে না বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

জেলা যুবলীগের দলীয় সুত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে আব্দুল কাদিরকে সভাপতি করে ও ভিপি বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা যুবলীগের কমিটি হয়েছিলো। এর পর আজ অবদি জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা যুবলীগের অনেকে চলে যান জেলা আওয়ামীলীগের নানা পদে। জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি পদে আসীন হন আব্দুল কাদির, সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হন ভিপি বাদল।

মহানগর যুবলীগের দলীয় সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ১৫ বছর আগে শেষবারের মতো হয়েছিলো শহর যুবলীগের সম্মেলন। ২০০৫ সালের এ সম্মেলনে শহর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাক নির্বাচিত হন যথাক্রমে শাহাদাত হোসেন ভুইয়া সাজনু ও আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জল। শহর যুবলীগের সেই কমিটি দিয়েই চলছে মহানগর যুবলীগের কার্যক্রম। তবে শহর যুবলীগের অনেকেই প্রায় ৫ বছর আগে চলে গেছেন মহানগর আওয়ামীলীগে। এদের মধ্যে অন্যতম শাহ নিজাম, জাকিরুল আলম হেলাল।

যুবলীগের পদ-পত্যাশী নেতাকর্মীরা জানায়, ২০০৩ থেকে ২০১১, ২০১১ থেকে ২০১৮ নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করে দুটি কমিটি। তবে এই দুই কমিটির গুটি কয়েকজন নেতা বাদে অন্তত: শতাধিক ছাত্রনেতার ঠাঁই মেলেনি যুবলীগের প্লাটফর্মে। এতে হতাশ হয়ে অনেকেই নিস্ক্রিয় হচ্ছেন। মুখ থুবড়ে পড়েছে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড। দীর্ঘ দিন কমিটি গঠিত না হওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েন অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর একই পদে থাকায় নতুন নেতৃত্বের ব্যাপারে আশাবাদী তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

যুবলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতে, জেলা-মহানগর যুবলীগের সম্মেলন শীঘ্রই হতে পারে এমন গুঞ্জনে অনেকটা নড়েচড়ে বসেছে ত্যাগী ও পরীক্ষিত পদ-প্রত্যাশী সাবেক ছাত্র ও যুবনেতারা। একইসাথে চাঁদাবাজি, মাদক কারবারীদের শেল্টারদেয়া সহ যাদের বিরুদ্ধে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তারাও কেন্দ্রে লবিং-তদবির শুরু করেছে। তবে এবার জেলা-মহানগর যুবলীগের কমিটিতে বিতর্কিতদের ঠাঁই হচ্ছে না বলে দাবী নির্ভরযোগ্য সূত্রের।

সুত্রটির দাবি, এবারের জেলা-মহানগর যুবলীগে বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে ক্লিন ইমেজ, পরিচ্ছন্ন, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের শীর্ষ নেতৃত্বে তুলে আনার চিন্তা আছে যুবলীগ হাই কমান্ডের। ইতোমধ্যে জেলা ও মহানগর যুবলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে দাবী সুত্রটির।

যুবলীগের এক নেতা বলেন, সংগঠনের সব তৃণমূলের ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের প্রত্যাশাÑ সংগঠনের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে সৎ, শিক্ষিত, সাবেক ছাত্রনেতা, ত্যাগী ও পরিশ্রমীদের মধ্যে থেকে আগামী সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করা হোক। তাহলেই সংগঠন আরো গতিশীল, প্রাণবন্ত ও উজ্জীবিত হবে।

এদিকে, বিতর্কিত নেতাদের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলেন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আসতে মরিয়া হয়ে আছেন কয়েকজন বিতর্কিত নেতা। এদের মধ্যে আলোচনায় আছেন ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মো. শরীফুল হক, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, কাশিপুর ইউনিয়ন যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি হাবিবুর রহমান শ্যামল, কুতুবপুরের যুবলীগ নেতা দুর্ধর্ষ মীর হোসেন মীরু, শিবু মার্কেটের বিতর্কিত নেতা মজিবুর রহমান, রামারবাগের আরেক বিতর্কিত নেতা আজমত উল্লাহ, বন্দরের বিতর্কিত নেতা খান মাসুদ, যুবলীগ নেতা শাহ ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজ, বক্তাবলীর যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন সহ অনেকে।

থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলামের বিরুদ্ধে জবরদখলের অভিযোগ রয়েছে। থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফুল হকের বিরুদ্ধে নানা কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। পোস্ট অফিস, লালপুরসহ আশে পাশের এলাকার কিছু লোক তার নাম ব্যবহার করে মাদক ব্যবসাসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে। তবে আগের তুলনায় শরীফ সন্ত্রাসীর রাজনীতি থেকে নিজে সরে আসলেও তার কিছু কর্মী বাহিনী এখনো চালাচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। যুবলীগ নেতা বিপ্লবের বিরুদ্ধে রয়েছে পরের জমি জবর দখল, মাদকের শেল্টারসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ।
বিচারের নামে ধর্ষককে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে বহিস্কৃতি যুবলীগ নেতা শ্যামলের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগের পাহাড়। কুতুবপুরের সন্ত্রাসী খ্যাত মীরুর বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যাসহ একাধিক মামলা এমনকি সম্প্রতি এক পুলিশ সদস্যকেও শাসিয়েছে মীরু। মজিবুরের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ সহ মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার এবং এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। শিবু মার্কেটের ডিস ব্যবসা ও ঝুট সেক্টরের অলিখিত নিয়ন্ত্রক আজমতের বিরুদ্ধে মারামারিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। নিজেকে যুবলীগ কর্মী হিসাবে জাহির করছে বন্দর ঘাটের অটোরিক্সাসহ সকল অবৈধ কাজের নিয়ন্ত্রক খান মাসুদ, আর তাই যুবলীগের পদ পতে হয়ে উঠেছেন মরিয়া।

শাহ ফয়েজ উল্লাহর বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ে সহ স্ত্রীকে মারধর সহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধেও রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। দেশের জাতীয় পতাকায় পা দিয়ে দাড়িয়ে থাকাসহ এলাকায় রাম-রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ রয়েছে এ জাহাঙ্গীরের বিরদ্ধে।

এছাড়াও এমন আরো অসংখ্য বিতর্কিত নেতাকর্মীরা পদ-পদবী বাগিয়ে আনতে দৌড়ঝাপ শুরু করছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে যুবলীগে এবার বিতর্কিত কারো ঠাই হবে না বলে দাবী তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

বাছাইকৃত সংবাদ

No posts found.