
প্রাইম নারায়ণগঞ্জ:
সোনারগাঁ ও তারাব পৌরসভা সহ জেলার প্রায় ৩৫ ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে নৌকার মাঝি হতে মাঠে রয়েছেন প্রায় ২শত প্রার্থী। মনোনয়ন প্রত্যাশায় দৌড়ঝাঁপ করছেন তারা। তফসিল ঘোষণা না হলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নিজ পাড়া মহল্লায় করছেন কর্মীসভা, সমাবেশ এমনকি গণসংযোগও করছেন অনেকে। তবে এ নিয়ে প্রায় সকল পৌরসভা ও ইউপিতে আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ দিতেও পিছপা হচ্ছেন না। নৌকার প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে প্রতিটি এলাকায়ই একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে বলেও জানা যায়।
স্থানীয় সরকারের আওতাধীন আগামী বছরের নির্বাচনগুলোতে নৌকার মাঝি হতে পারলেই জয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন এসকল মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের ধারণা, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন এবং গতবারের পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনের আদলে বা ওই নির্বাচনের কাছাকাছি কোনও উপায়ে এবারও নির্বাচন হবে। এ কারণেই নির্বাচনে জয়লাভের ক্ষেত্রে জনগনের মন জোগানো নিয়ে তেমন চিন্তিত না হয়ে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতেই উঠেপড়ে লেগেছেন তারা। একারণে জেলার অন্তত ২শতাধিক নেতা বা প্রার্থী রয়েছেন, যারা মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তদবিরে ব্যস্ত রয়েছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভায় আ.লীগের মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যে প্রতিদ্বন্দীতা শুরু হয়েছে। এখানে আওয়ামীলীগ নেতা ছগীর, এড. ফজলে রাব্বী, গাজী মজিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী নৌকায় উঠার চেষ্টা করছেন, একই সাথে জোটের পক্ষ থেকে ডালিয়া লিয়াকতও জোটের প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন বলে জানা যায়।
এছাড়া. রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভা নির্বাচনেও পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী পত্নী বর্তমান মেয়র হাসিনা গাজীর সাথে নৌকার মনোনয়ন যুদ্ধে মাঠে নেমেছেন তরুন নেতা কে. এম মাহমুদ হাসান সিয়ামসহ বেশ কয়েকজন। তবে রূপগঞ্জ তথা তারাববাসীর দাবী নৌকায় উঠবেন হাসিনা গাজীই। কেননা বর্তমান মেয়াদে তার সময়ে তারাব পৌর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা এর আগে কখনোই দেখে নি পৌরবাসীরা। তাদের মতে, মাঠ থেকে ঘাট, স্কুল থেকে মাদ্রাসা, কলেজ সর্বত্রই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন বর্তমান মেয়র। কাজেই আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে তার বিকল্প কাউকে কখনোই ভাববে না কেন্দ্র এমনটাই মনে করে তৃণমুলের নেতাকর্মীরাও।
এদিকে, জেলার ৩৯ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়নের নির্বাচন হচ্ছে না প্রায় ২৮ বছর। কিছুদিন আগেই হয়ে গেল রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের নির্বাচন। এছাড়াও সীমানা জটিলতা ও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের নির্বাচন হবে না বলেও জানা যায়। সবদিক মিলিয়ে আগামী বছর কয়েক ধাপে জেলার প্রায় ৩০ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর এ ৩০ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দীতা। ভোটারদের কথা আপাতত মাথায় না রেখে দলীয় মনোনয়নের দিকেই ঝুকছেন প্রায় সকলে এমনটাই দাবী নির্ভরযোগ্য সুত্রের।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা যতই দীর্ঘ হোক কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, এবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দিতার নির্বাচন আর হবে না। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও তৃণমূলের একাধিক সুত্র থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতা ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে মনে করেন, আসন্ন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনও প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ হবে না। বিএনপির ভঙ্গুর রাজনীতির কারণে মাঠে তেমন একটা বিরোধী দলীয় প্রতিদ্বন্দী না থাকলে জয় অনেকটা সহজ হবে।
এ কারণেই মনোনয়ন পাওয়া মানেই বিজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া বলে মনে করছেন আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এ ধারণা থেকে ভোটের মাঠ গোছানোর আগে মনোনয়ন নিশ্চিত করতেই বেশি দৌড়ঝাঁপ করছেন আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন, মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতারা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা ও ব্যবসায়িক কার্যালয়সহ সম্ভাব্য এমন কোনও জায়গা নেই, যেখানে তদবির করছেন না। তারা মনে করেন, দলের মনোনয়ন পেতে যত নিয়মকানুন পালন করতে হয়, নির্বাচনে জেতার জন্য ততটা করতে হয় না। তাই মনোনয়ন যেন নিশ্চিত করতে পারেন, আগেভাগে সেই চেষ্টাই করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তৃণমূল মনে করে, ‘আওয়ামী লীগ এমন একটি সংগঠন, যে দলে শেখ হাসিনা টিকিট দিলেই জিতে আসতে কষ্ট হবে না। এবারও নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না। ফলে মনোনয়নের তদবিরই আগে করছে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।’
তবে এমন ধারণা যারা পোষণ করছেন তাদের সংখ্যা বেশি হলেও যোগ্য-জনপ্রিয়-পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতারাই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাবেন বলে জানান আওয়ামীলীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের কয়েকজন নেতা। যারা তদবির নিয়ে ব্যস্ত নয়, মাঠ গোছানোর কাজেই বেশি ব্যস্ত। আর যারা মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তদবিরে ব্যস্ত। তারা খুব একটা লাভবান হবে না বলেও মনে করেন তারা। মাঠের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান রয়েছেন, নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়, মনোনয়ন-প্রত্যাশী এমন নেতার সংখ্যা কম।
দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একটি সুত্র জানায়, আওয়ামী লীগের অনুসন্ধানী টিম ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যেসব নেতা মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন, তাদের বেশিরভাগেরই নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক অবস্থান সুসংহত নয়। কিন্তু মনোনয়ন পেতে চেষ্টা ও তদবিরে পিছিয়ে নেই তাদের কেউই। এই নেতারা নিজেদের অবস্থান তৈরি না করে আগেই মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চেষ্টা তদবিরে ব্যস্ত। তাদের ধারণা, মনোনয়ন পেলেই জয়ী হবেন। সুত্রটির দাবী, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। তাতে দেখা গেছে, মাঠে দুর্বল হলেও তদবিরে এগিয়ে আছে, এমন মনোনয়ন-প্রত্যাশীর সংখ্যাই বেশি।
No posts found.