
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও বিপদ কাটেনি এখনো। বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের। সব পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে। সরকারও সব কিছু স্বাভাবিক করার সুযোগ দিয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ মানছে না অপরিহার্য স্বাস্থ্যবিধি। গতকাল সোমবার (০৯ নভেম্বর) নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ ও চাষাড়া রেল স্টেশনে গিয়েও স্বাস্থ্যবিধি মানতে যাত্রীদের অনীহা চোখে পড়ে। সকাল ৯টার ট্রেনের সময় দেখা গেলো, যাত্রীদের অনেকেই মাস্ক ছাড়া ট্রেনে প্রবেশ করছে। মাস্ক ছাড়া ট্রেনে প্রবেশ করা এক যাত্রীকে জিজ্ঞাসা করলে রীতিমতো খেপে গিয়ে বলেন, ‘আমি তো একা নই, অনেকেই মাস্ক পড়ে নাই তাদের গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন’ রেল স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় যাত্রীরা মোটেও সচেতন নয়।
চাষাড়া স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই। জানতে চাইলে একজন যাত্রী বলেন, ‘বেশি সময় মাস্ক মুখে রাখতে পারি না। দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই খুলে রেখেছি।’
তবে স্টেশনগুলোতে কোনো প্রবেশদ্বার বা গেট না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে জানা যায়।
মাস্ক পড়ে থাকা সচেতন যাত্রী মেহেদী হাসান বলেন, নারায়ণগঞ্জ ও চাষাড়া রেলস্টেশনে কোনো গেট না থাকায় স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। গেট থাকলে সবাইকে বাধ্য হয়ে হলেও মাস্ক ব্যবহার করতে হতো।
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার গোলাম মোস্তফা প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমরা সকল যাত্রীকেই মাস্ক ব্যবহার করতে বলি। কিন্তু অনেকে আবার ক্ষেপে গিয়ে বলেন, মরলে আমি মরবো, আপনার কি ? তখন আর কিছুই বলার থাকে না। তারপরও আমরা টিকেট কাউন্টারে বলে দিয়েছি মাস্ক ছাড়া কারো কাছে টিকেট যেন বিক্রি করা না হয়।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা, চিটাগাংরোড গামী ৬টি পরিবহন কোম্পানির প্রায় ৩ শতাধিক বাস চলাচল করে। এ বাসগুলোতে উঠে বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। গুনে দেখা গেল এক একটি বাসে ২৫-৩০ জন যাত্রীর মধ্যে ১৫-২০ জনের মুখে মাস্ক আছে। কয়েকজন আবার মাস্ক মুখে না পরে কানে ঝুলিয়ে রেখেছে। জানতে চাইলে এক যাত্রী বলেন, ‘করোনা তো নাই। এইগুলা সব আন্দাজি তথ্য দেয়। আমি করোনা বিশ্বাস করি না, তাই মাস্কও পরি না।’
গণপরিবহনে মাস্ক না পড়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে, তারপরও অনেকেই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। গত রোববারও মাস্ক না পড়া ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৫ জনকে জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মানজুরা মুশাররফ ও সানজিদা আক্তার।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালটি করোনা রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হওয়ায় নগরী ও শহরতলীর রোগীদের চাপ এসে পড়েছে ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল হিসাবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে। তবে সোমবার সকাল থেকে থেকে দেড়টা পর্যন্ত হাসপাতালটির বহির্বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অনেক স্বজন মাস্ক ব্যবহার করছে না। অনেকের পকেটে মাস্ক থাকলেও ব্যবহার করছে না। আবার কেউ কেউ ঝুলিয়ে রাখছে থুতনিতে। অনেকে আবার গেট দিয়ে ঢোকার সময় মাস্ক ব্যবহার করছেন কিন্তু ভিতরে প্রবেশের পর খুলে ফেলছেন।
তবে গেটের সামনে দায়িত্বরত আছেন হাসপাতালের কর্মচারী সাউদ। তিনি কঠোরতার সহিত সবাইকে মাস্ক পড়ে হাসপাতালে প্রবেশের নির্দেশ দিচ্ছেন। এতে প্রায় সকলেই ভিতরে প্রবেশের সময় মাস্ক পড়ছেন কিন্তু প্রবেশের পর অনেককেই মাস্কু খুলে রাখতেও দেখা গেছে।
অসুস্থ্য ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন এক বাবা। ছেলের মুখে মাস্ক থাকলেও বাবার মাস্ক ঝুলিয়ে রেখেছেন থুতনিতে। মাস্ক থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন কেন জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘মাস্ক আমার সাথেই আছে তবে ছেলেটা কয়েকদিন অসুস্থ্য হওয়ায় দু:শ্চিন্তায় পড়তে মনে নেই।’
একজন চিকিৎসক প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘শুধু হাসপাতালে নয়, সব স্থানেই মাস্ক পরা জরুরি। কিন্তু মানুষ সেটা মানছে না। আমরা চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের মাস্ক না পরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। তারপরও গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় শক্ত অবস্থান নেওয়া যায় না।’
No posts found.