
প্রাইম নারায়ণগঞ্জ:
এক সময় ছিলেন ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্বে। পরে শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি থেকে বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন মীর সোহেল আলী। এতেও মন ভরছে না তার এমনটাই মনে করছে তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। আর তাই এবার তিনি হতে চান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চেয়ে ফেসবুক সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় চালানো হচ্ছে প্রচার প্রচারণা। ঝুলছে বিভিন্ন স্টাইলে বানানো এসব পোষ্টার। আর এসব পোষ্টার-লিফলেট দেখে আওয়ামীলীগের তৃণমুলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এক সময় যিনি ছিলেন বিএনপির অঙ্গ সংগঠন তথা ছাত্রদলের ফতুল্লা থানার সভাপতি, এখন তিনি চান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হতে।
তাছাড়া বিএনপি ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েও খুব একটা শুনাম কামাতে পারেন নি মীর সোহেল এমনটাই দাবী তাদের। তাদের মতে, আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েও কখনো বিসিক শিল্পাঞ্চলের নিয়ন্ত্রক, কখনো থানায় উপস্থিত হয়ে পুলিশের সামনে বাদীকে পেটানো, কখনো কখনো সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের খবরের শিরোনাম হন এই মীর সোহেল। তার মতো একজন নেতাকে যদি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীণ করা হয় তাহলে আওয়ামীলীগের এতো বিশাল অর্জন নিমিশেই তলানীতে নেমে যেতে পারে বলেও মনে করেন তারা।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, ৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পরে সাংসদ শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ দেন, ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের সভাপতি মীর সোহেল আলী। শামীম ওসমানের আশির্বাদ থাকায় ফতুল্লা থানা যুবলীগের পদ পেয়ে যান সহজেই। এরপর থেকেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন মীর সোহেল। বিসিক শিল্পাঞ্চল ফতুল্লায় অবস্থিত হওয়ার কারণে তৎকালীণ সময়ে বিসিক ঝুট সেক্টরের হর্তা কর্তা তথা অঘোষিত নিয়ন্ত্রক হয়ে যান তিনি। ফলে ওই আমলে মীর সোহেল ভূমি দস্যুতা, ঝুট সন্ত্রাস আর ফতুল্লার বিভিন্ন শিল্পকারাখানায় চাঁদাবাজি করতেন বলেও অভিযোগ উঠেছিলো।
তারপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে শামীম ওসমানের আসনে জয়লাভ করেন মিষ্টি মেয়ে খ্যাত কবরী। তখন শামীম শিবির থেকে অনেকটা সরে এসে কবরীর পক্ষে যোগ দেন। এরপর কবরীর নাম ভাঙ্গিয়ে শুরু করেছিলেন সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব এমনটাই জানান ফতুল্লা এলাকার আওয়ামীলীগের প্রবীণ ব্যক্তিরা।
তবে ২০১৪ সালে পুনরায় শামীম ওসমান এমপি নির্বাচিত হলে ফিরে আসেন শামীম শিবিরে। হয়ে উঠেন শামীম শিবিরের অন্যতম সৈনিক। এর পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মীর সোহেল আলীকে। ২০১৭ সালে ঘোষিত জেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে রাখা হয় তাকে। সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও শুরুর দিকে জেলা আওয়ামীলীগের দু/চারটি মিটিং সভা-সমাবেশে দেখা গেলেও এখন আর জেলা আওয়ামীলীগের সভা-সমাবেশগুলোতে খুব একটা দেখা যায় না তাকে। তবে শামীম ওসমান বা ওসমান পরিবারের যে কোন সভা-সমাবেশে তার উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো এমনটাই জানান নেতাকর্মীরা।
এদিকে, মীর সোহেলকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দেখতে চাই লেখা সম্বলিত পোষ্টারের বিষয়ে আওয়ামীলীগের প্রবীণ কয়েকজন রাজনীতিবীদ ক্ষোভের সুরে বলেন, মীর সোহেল কেন যে কেউ চাইলেই বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারে। কেননা এখন তো আর দলীয় কর্মকান্ড মূল্যায়ণ করে পদায়ন করা হয় না। এখন যে যতো বড় চাটুকার বা যে যতো বেশী পিছনে পিছনে ঘুরে জ্বী হুজুর জ্বী হুজুর করতে পারবে তারাই বড় বড় পদে আসীন হবে বলে মনে করেন তারা।
তারা আরও বলেন, লাঙ্গল মার্কা খ্যাত বাদলই যদি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারে তবে মীর সোহেল কেন পারবে না। যে ব্যক্তি আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক ফেলে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করতে পারে সে যদি সাধারণ সম্পাদক হতে পারে তবে বিএনপির রাজনীতি থেকে উঠে আসা মীর সোহেলও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারে। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই বলেও মনে করেন তারা।
তবে, ফতুল্লা থানা ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মতে, দলের জন্য কি এমন অবদান রেখেছেন মীর সোহেল যে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে আসীণ হতে চান তা আমাদের জানা নেই। তারা ব্যঙ্গ করে আরও বলেন যে, তবে এটা ঠিক জেলার ওসমান লীগ খ্যাত ওসমান পরিবারের জন্য অনেক কিছুই করেছে সে। আর তাই বরাবরের মতো এবারের জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে শামীম ওসমান যদি তার শক্তির যথাযথ প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে হয়তো মীর সোহেলই হবেন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক এমনটাই ধারণা তাদের।
অপরদিকে মীর সোহেল আলীর সমর্থকদের দাবী, মীর সোহেল তার কর্মগুণের কারণে এবং দলের জন্য বিভিন্ন ত্যাগ স্বীকারের কারণে বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। এবারও দলের হাই কমান্ড তার কর্মগুণের কারণে তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে আসীণ করবেন।
No posts found.