
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ হলেও নিজেদের মধ্যে অন্তর্দন্দ্ব-কোন্দলে বেশ চাঙ্গা থাকছে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। কমিটি গঠন থেকে শুরু করে নির্বাচন ও মনোনয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দলটির নেতাকর্মীরা হর-হামেশাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, কোনো কমিটি হলে সেই কমিটির বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল, অবাঞ্চিত ঘোষণাসহ নানা ঝামেলায় লিপ্ত হচ্ছে। সর্বশেষ গত বুধবার মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক ঘোষিত ৬টি ইউনিট কমিটির বিরোধীতা করে নগরীতে ঝাড়ু মিছিল করে বিরোধী গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় জেলা ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, তৃণমূল নেতাকর্মীসহ সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে।
আন্দোলনে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলো একের পর এক ব্যর্থতা বিগত কয়েক বছরে জেলার রাজনীতিতে প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে আছে। একই সঙ্গে দলটির জেলা ও মহানগরীর সিনিয়র নেতৃবৃন্দের স্বার্থবাদী আচরণ ও নিজ বলয় কেন্দ্রীক রাজনীতির কারণে তা দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনার নতুন খোরাক যুগিয়েছে বলে মনে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার বিরোধী আন্দোলনের শুরু এ নারায়ণগঞ্জ থেকেই হবে বিএনপির নেতাকর্মীরা বারবার এ ধরনের হুংকার, হুশিয়ারী উচ্চারণ করলেও কার্যত তারা রাস্তায় দাড়িয়ে দলীয় কোনো কর্মসূচিই প্রকৃতঅর্থে বাস্তবায়ন করতে পারে না। আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে না পারলেও তারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ-কোন্দল ও আলাদা আলাদা বলয় তৈরি করে আলোচনায় থাকে। যদিও দলটির সিনিয়র নেতাদের অনেকে বলছেন, এতো বড় একটি দলে এ ধরনের ঘটনা হতেই পারে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, যখনই বিএনপি বা এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোর কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়, ঠিক তখনই অপর একটি পক্ষ নবগঠিত ঐ কমিটির বিরোধীতা করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি, হুশিয়ারী দিয়ে থাকেন, উত্তপ্ত হয় বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গন। তাছাড়াও যে কোনো নির্বাচনে নির্বাচনী লড়াই বা মনোনয়নের বিষয় সামনে আসলেও একই পদে লড়াই করতে বেশ কয়েকজন নেতা তাদের জোড় তদ্ববির বা লবিং চালায়। ফলে কেউ একজন সমর্থন পেলে তার বিরোধী পক্ষরা একাট্টা হয়ে বিরোধীতায় নেমে পড়ে। সবশেষ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ ও সাধারণ সম্পাদক বাবু কর্তৃক ঘোষিত মহানগর ছাত্রদলের আওতাধীন ৬টি ইউনিট কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে নগরীতে বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল করে ছাত্রদলেরই অপর একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা।
এছাড়া বিগত কয়েক বছরে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে দোষারোপ, পরস্পর বিরোধীসহ এমন আরো বেশ কিছু পাল্টাপাল্টি হুমকি ও অভিযোগের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে এড. সাখাওয়াত নির্বাচন করার পর তার বিরুদ্ধে সরকারী দলের কাছ থেকে ২ কোটি টাকা নেয়ার অভিযোগ তুলেন মহানগর বিএনপির আরেক নেতা এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। সরকারী দলের সাথে আতাতের অভিযোগ ওই ঘটনা নিয়ে দলের মধ্যে শুরু হয়েছিলো বেশ আলোচনা-সমালোচনা।
এর পরেই কাজী মনির ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হওয়া সদ্য বিলুপ্ত জেলা বিএনপির কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকেই এ কমিটির বিরোধীতা করে মাঠে নামে জেলা বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার নিজস্ব বলয়ের নেতাকর্মীরা।
জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির এক সিনিয়র নেতা অবশ্য কর্মী-সমর্থকদের দ্বন্দ-কোন্দলের বিষয়কে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘সব দলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলে বোঝা যাবে বিএনপি এখনো জনপ্রিয় ও শক্তিশালী অন্যতম একটি রাজনৈতিক দল। আর প্রতিটি নির্বাচন বা কমিটি গঠনের আগে-পরে নেতাকর্মীদের মধ্যে মন-মালিন্য বা সংঘাতময় পরিস্থিতির ঘটনাও কোনো নতুন কিছু নয়। তারপরও গত বুধবার নগরীতে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ছাত্রদলেরই অপর গ্রুপের যে ঝাড়ু মিছিল ও বিক্ষোভ হয়েছে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
No posts found.