৯ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, বিকাল ৪:১৫

নামধারী ডাক্তারদের অপচিকিৎসা!

প্রাইমনারায়ণগঞ্জ.কম

নগরীর প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ওষুধের দোকান। ‘ড্রাগলাইসেন্স’ ছাড়াই ওই সব দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ওষুধ। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের ক্ষমতাহীনতার সুযোগে সেখানে চিকিৎসার নামে ‘ডাক্তার’ নামধারী অনেকেই রোগীদের অবাধে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করাচ্ছেন। এতে ওই সব রোগীর বিশেষ করে শিশুস্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় নগর এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান জরুরী হয়ে পড়ছে বলে মনে করে নগরবাসী।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নগরীর চাষাড়া থেকে শুরু করে ২ নং রেল গেইট, দেওভোগ আখড়ার মোড়, পালপাড়ার মোড়, নিতাইগঞ্জ, নলুয়া, পাইকপাড়া, উকিলপাড়াসহবেশ কিছু এলাকা ও পাড়া-মহল্লায় অনুমোদনহীন শতাধিক ছোট-বড় ওষুধের দোকান গড়ে উঠেছে। ওই সব দোকানি ‘ডাক্তার’ নামধারী হওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য তাদের কাছেই যায়। সেখানে রোগীর লক্ষণ যা-ই হোক, দামি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গছিয়ে দেওয়াই ওই সব দোকানির মূল ব্যবসা। শুধু অ্যান্টিবায়োটিক নয়, স্টেরয়েড, উচ্চ মানের পেইনকিলারসহ অনেক ওষুধ আছে, যা প্রেসক্রাইব করার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও চিন্তাভাবনা করেন। অথচ ‘ডাক্তার’ নামধারী এলাকার অনেক ওষুধের দোকানি বিভিন্ন রোগীর শরীরে সংবেদনশীল ওই সব ওষুধ অহরহ ব্যবহার করছেন। ফলে দিনদিন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে এলাকার সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে শিশু রোগীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শুধু মুনাফার আশায় এলাকার এক শ্রেণির অসাধু দোকানি বিভিন্ন ওষুধ কম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে অবাধে সংবেদনশীল বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি ও ব্যবহার করে আসছেন। এতে রোগীকে পুঁজি করে সেখানে তাঁরা গড়ে তুলেছেন অপচিকিৎসার এক বিশাল আয়োজন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ক্ষমতাহীনতার সুযোগে চিকিৎসার নামে ডাক্তার নামধারী অনেক দোকানি রোগীদের অবাধে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করাচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে বহুবিধ অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিজটান্স’ তৈরি হয়। পরবর্তিতে রোগাক্রান্ত ওই সব শিশুদের শরীরে আর কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করায় তাদেরকে সুস্থ করে তোলা অনেকটা দূরুহ হয়ে পড়ছে।

তিনি আরো জানান, বর্তমান করোনা মহামারির কারণে হাসপাতালগুলোতে আসা রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তবে করোনার সুযোগে রোগীকে পুঁজি করে অপচিকিৎসা চালাচ্ছেন এলাকার নামধারী ডাক্তাররা।

স্বাস্থ্য বিভাগের আরেক কর্মকর্তা বলেন, রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত একজন এমবিবিএস চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার শব্দটি লিখতে পারেন না। কিন্তু এলাকার অনেকেই তাদের ব্যাবস্থাপত্রের প্যাডের উপরে নিজের নামের আগে ডাক্তার শব্দটি লিখে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে অপচিকিৎসার কাজ চালিয়ে আসছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সচেতন মহলের মতে, এলাকার অবৈধ ওষুধের দোকান বন্ধের পাশাপাশি নামধারী ডাক্তারদের অপচিকিৎসা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে আরো তৎপর হতে হবে। অপচিকিৎসার ফলে স্থানীয় অনেক রোগীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ার মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে বলেও জানান তারা। তাই শীঘ্রই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানান তারা।

বাছাইকৃত সংবাদ

No posts found.