
আইইডিসিআর হতে হটস্পট, এপিসেন্টার, করোনা ক্লাষ্টার ঘোষণা করায় এবং সংক্রমণের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকায় নারায়ণগঞ্জে বেড়েছে মাস্ক, গ্লাভস, পারসোনাল প্রোটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই), স্যানিটাইজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবহার। কিন্তু, নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় ব্যবহারের পর এসব সুরক্ষা সামগ্রী যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এতে করোনা বর্জ্যের ফলে নারায়ণগঞ্জে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। একই সঙ্গে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও।
রাস্তা-ঘাটে অনেককেই দেখা যায়, ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট কোনো স্থানে না ফেলে যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছে করোনা সুরক্ষায় ব্যবহৃত এসব সুরক্ষা সামগ্রী। নগরীর ৩ নং খেয়া ঘাট এলাকায় একটি পরিত্যক্ত মাস্ক নিয়ে তিনটি কুকুর ছানাকে টানাটানি করতে দেখা যায়। আরো দেখা যায়, বিবি রোডের পুরাতন কোর্টের বিপরীতে রাস্তার মাঝে, চাষাড়া এলাকায় মাধবী প্লাজার সামনে রাস্তায় পড়ে আছে মানুষের ব্যবহৃত পরিত্যক্ত মাস্ক। এছাড়াও পরিত্যক্ত বিভিন্ন সুরক্ষা সরঞ্জাম বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেয়া যায়।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, এসব সুরক্ষা সামগ্রীতে করোনা ভাইরাস কয়েকঘন্টা এমনকি কয়েকদিনও বেঁচে থাকতে পারে। সেদিক থেকে, পরিবেশে এবং মানুষের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পারতে পারে, যা এখন হয়তো বোঝা না গেলেও কিছুদিন পর ঠিকই বুঝা যাবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞ এসব ডাক্তারদের।
তাছাড়া, বর্ষা মৌসুম চলমান থাকায় প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পরিত্যাক্ত এসব সুরক্ষা সামগ্রী চলে যাচ্ছে ড্রেনে, ড্রেন থেকে নদীতে। সর্বপোরি এগুলো থেকে যাচ্ছে আমাদের চারপাশেই তথা পরিবেশের মাঝেই। ফলে ভবিষ্যতে এসবের ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে মানবজীবন, জীববৈচিত্র ও পরিবেশের উপর।পরিবেশবিদদের আশংকা, করোনা থেকে আত্মরক্ষার জন্য যে উপকরণগুলো অত্যাবশ্যকীয়, ভবিষ্যতে তা হয়ে উঠবে পরিবেশ দূষণের অন্যতম বিপদের কারণ। একবার ব্যবহার করা মাস্ক এবং গøাভসকে এ ক্ষেত্রে দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।
তাদের মতে, সুতি কাপড়ের তৈরি মাস্ক দ্রæত পচনশীল হওয়ায় পরিবেশের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে পলিভিনাইলের তৈরি মাস্ক এবং নাইট্রাইল, ভিনাইল এবং প্লাস্টিক দিয়ে বানানো হ্যান্ড গøাভস দীর্ঘদিন পরিবেশে থেকে যায় ও এর ক্ষতি করে। একই সঙ্গে মানুষ যে ধরনের স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছে, তার প্রায় সবই প্লাস্টিকের বিভিন্ন বোতলে বিক্রি করা হয়। স্যানিটাইজারের এসব খালি বোতলও নতুন করে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিমত তাদের।
করোনা ক্লাষ্টার হিসাবে পরিচিতি লাভ করায় ইতোমধ্যেই নগরী ও নগরীর বাইরের যত্রতত্র মাস্ক, গøাভস ও সানিটাইজারের বোতল পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষসহ চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরাও এসব সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করছেন। এসব সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের পর ধ্বংস করার কথা বলা হলেও এ বিষয়ে জনসচেতনতা না থাকায় এবং কোনো নির্দেশনা বা নীতিমালা না থাকায় যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে পরিত্যক্ত এসব সুরক্ষা সামগ্রী। ফলে করোনার সুরক্ষা সামগ্রীই নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য ভয়ংকর পরিণাম ডেকে আনতে পারে, হয়ে উঠতে পারে করোনা সংক্রমণের অন্যতম নিয়ামক। ফলে অতিমাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী।
এসব প্রসঙ্গে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যরা বলেন, করোনা সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের পর সঠিকভাবে ধ্বংস না করলে পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। প্লাস্টিকের যে দূষণ, করোনা বর্জ্যেরও একই দূষণ। এই দূষণের পরিমাণ এখন অনেক বেশি হচ্ছে। আমরা বাহির থেকে এসে মাস্ক কিংবা গøাভস খুলে অন্যান্য বর্জ্যের সঙ্গে ফেলে দিচ্ছি। এসব সুরক্ষা সামগ্রীতে যদি কোনো ধরনের জীবাণু থাকে, তাহলে যে এ বর্জ্য নিয়ে যাচ্ছে সে আক্রান্ত হতে পারে। যেখানে এই বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সেখানেও জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। এরপর এই বর্জ্য আবার নদীনালা, খাল বিলে চলে যাচ্ছে। পরিবেশের ক্ষতি করছে।
জেলা কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি, বিএমএ জেলা শাখার সভাপতি ডা: শাহনেওয়াজ চৌধুরী বলেন, এগুলো মাটিতে গর্ত করে পুতে ফেলা বা পুড়িয়ে ধ্বংস করার কথা, কিন্তু এগুলো যদি যত্রতত্র ফেলে রাখা হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হবে। যদি কারো করোনা ভাইরাস থাকে সে মাস্ক ব্যবহার করে তা যদি যত্রতত্র ফেলে দেয় তাহলে এটা বাতাসে ছড়ানোর মাধ্যমে অন্যরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
এছাড়া কিছু ছেলে আছে যারা এগুলো কুড়িয়ে নেয়, ওরাও আক্রান্ত হতে পারে, সর্বোপরি এটা বড় ধরনের ঝুঁকির কারণে হতে পারে। তাই এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের বড় ভুমিকা রয়েছেন বলেও মনে করেন তিনি।তিনি আরও বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যদি কারো বাড়ির ময়লার সাথে পরিত্যক্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম থাকে তাহলে সে বাড়ির ময়লা নেয়া হবেনা। নারায়ণগঞ্জেও এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি
No posts found.