
প্রাইম নারায়ণগঞ্জঃ
অনুমোদন না নেয়ায় নগরীর ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হলেও এখনো কার্যক্রম অব্যাহত আছে। নগরীর ১২ নং ওয়ার্ডের বার একাডেমী স্কুলের বিপরীত পাশে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক, দক্ষ নার্স, পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধা এমনকি প্রয়োজনীয় সরকারী দপ্তরগুলোর লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। সম্প্রতি এ প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়।
অভিযোগ উঠেছে, কোনোরকম অনুমোদন না নিয়ে, নিবন্ধন ও পরিচালনার কোনো শর্ত পূরণ না করেই প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখা হয়। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার থেকে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সরকারি নীতিমালার যেসব শর্ত মানা হয়নি, সেগুলো হলো ডিজিও লাইসেন্স তথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স সহ বেশ কয়েকটি দপ্তরের লাইসেন্স না নেয়া, নির্দিষ্ট প্যাথলজি বিভাগসহ ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার অত্যাধুনিক কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকা।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকল নিয়মনীতি অমান্য করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করায় গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করার পরও তারা নিয়মিত রোগী দেখছেন, চিকিৎসা ও বিভিন্ন টেস্টের নামে রোগীদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কিভাবে বা কোন ক্ষমতার বলে তারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। তারা আজ সকালেও কয়েকজন রোগীর ড্রেসিংসহ বিভিন্ন টেস্ট করিয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তবে তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের (সিভিল সার্জন কার্যালয়ের) কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা এদের সাথে জড়িত থাকতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টারই নয়, নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতেই চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত সেবিকা, দক্ষ প্যাথলজিষ্ট এসবের কিছুই নেই সহ। নেই সরকারি অনুমোদনও। ক্লিনিক বা ডায়াগনষ্টিকগুলোর মালিকরা আগে হয়তো কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিকে নার্স, ডাক্তারের সহযোগী, ওয়ার্ড বয়, কর্মচারী হিসাবে কাজ করেছে। এখন তারাই নামে বে-নামে ব্যাঙের ছাতার মতো ক্লিনিক বা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার খুলে সেগুলোর মালিক বনে যাচ্ছেন, যাদের প্রায় সকলে নিজেই আবার এসব প্রতিষ্ঠানে ডাক্তার বা সার্জনের কাজ করে এসব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অস্ত্রপচারসহ বিভিন্ন ছোটবড় অপারেশন করছে। যত্রতত্র, যে কোনো ব্যক্তির দ্বারা অস্ত্রপচারের ফলে ভুল চিকিৎসায় বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। নগরীর অসংখ্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলছে এমন অবস্থা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি খোলা। তারা রোগী বা রোগীর স্বজন ভেবে এ প্রতিবেদককে স্বাগত জানায়। তারপর যখন সংবাদকর্মী হিসাবে পরিচয় পায় তখন তারা বলে আমাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাহলে এখানে আপনারা বসে আছেন কেন জানতে চাইলে তারা বলে, আমরা এমনি কথা বলছি।
প্রতিষ্ঠানের ভিতরেই ছিলেন ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্ণধার ইমন। তিনি ক্যামেরা দেখে এগিয়ে এসে বলেন, আমাদের কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি, আমরা নিজেরাই বন্ধ রেখেছি। ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় কোন কোন দপ্তরের অনুমতি লাগে জানেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সব জানেন আমার বড় ভাই রবিন।
রবিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা (সিভিল সার্জন কার্যালয়) আমাকে মৌখিকভাবে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছে, আমার প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলেনি। আমি প্রতিষ্ঠান খুললেও কোন রকম কাজ করি না। রবিন আরও জানান, কাগজপত্রের জন্য আবেদন করেছি, কিছুটা সময় লাগবে।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ইমন ডায়াগনষ্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। তারপরও যদি তাদের কার্যক্রম চলে তাহলে আমি সরেজমিনে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
স্থানীয়রা জানান, ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গতকালও রোগী দেখেছে তারা।
No posts found.